পঞ্চম শ্রেণীর পরিবেশ
পঞ্চম অধ্যায়:পরিবেশ ও উৎপাদন
Class 5 poribesh chapter 5 important question answer ক্লাস ফাইভ পরিবেশ পঞ্চম অধ্যায় পরিবেশ ও উৎপাদন প্রশ্ন উত্তর সাজেশন
গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
পরিবেশ ও উৎপাদন আমাদের কৃষিজ সম্পদঃ ধান
১) জমি চষার দুটি আধুনিক যন্ত্রের নাম লেখো।
উত্তর:পাওয়ার টিলার ও ট্র্যাক্টর।
২) পাওয়ার টিলার কি?
উত্তর:যে যন্ত্রের সাহায্যে ছোট ছোট জমি খুব তাড়াতাড়ি চষে ফেলা যায়, তাকে পাওয়ার টিলার বলে।
৩) টিলার কথার অর্থ কি?
উত্তর:যে চাষ করে।
৪) হারভেস্টার কি? এটা দিয়ে কি করা হয়?
উত্তর:যে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটা ও ঝাড়াই করা হয়, তাকে হারভেস্টার বলে। হারভেস্টার এর সাহায্যে ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই এর মাধ্যমে ধানকে খড় থেকে আলাদা করে এক জায়গায় জড়ো করে রাখা হয়।
৫) হারভেস্টিং বলতে কি বোঝো?
উত্তর:ধান কাটা, খড় থকে আলাদা করা ও এক জায়গায় জড়ো করা, এই সবকিছুকে একত্রে হারভেস্টিং বলে।
৬) ধান রোয়া কি?
উত্তর:কাদামাটিতে ধানের চারা পোঁতাকে ধান রোয়া বলে।
মানুষে টানা লাঙল
১) চাষের কাজ প্রথম শুরু হয়েছিল কাদের বুদ্ধিতে?
উত্তর:মেয়েদের বুদ্ধিতে।
২) প্রথম কিসের লাঙল দিয়ে চাষ হত?
উত্তর:কাঠের লাঙল দিয়ে।
৩) প্রথমে লাঙল কীভাবে টানা হত?
উত্তর:জমি চষার জন্য একজন মানুষ লাঙল চেপে ধরত এবং অন্য একজন মানুষ লাঙল টেনে টেনে নিয়ে যেত।
৪) কোন কোন পশুকে মানুষ লাঙল টানার কাজে ব্যবহার করত?
উত্তর:গোরু, মহিষ, ঘোড়া প্রভৃতি প্রাণীকে।
৫) প্রথম চাষের কাজ কীভাবে শুরু হয়েছিল?
উত্তর:আদিমকালে পুরুষেরা শিকার করত ও বনের লতাপাতা আনতে যেত এবং মেয়েরা ঘর সামলাত। একদিন তারা দেখল তারা যে ফল খেয়ে বীজ ফেলে দিচ্ছে তা থেকে গাছ বেরোচ্ছে।
তখন তারা ভাবল এই চারাগাছগুলিকে যদি যত্ন করা যায় তাহলে সহজেই খাওয়ার শস্য পাওয়া যাবে। এইভাবে শুরু হল চাষের কাজ।
সার আর কীটনাশক
১) একটি জৈব সারের নাম লেখো।
উত্তর:গোবর সার।
২) গোবর সার কীভাবে পাওয়া যায়?
উত্তর:গবাদি পশুর মল বা গোবর পচিয়ে গোবর সার পাওয়া যায়।
৩) গোবর দিলেই ফলন বাড়বে তা মানুষ কীভাবে বুঝল?
উত্তর:আগে মানুষ গোরুকে দিয়ে লাঙল টানাতো। লাঙল টানার পর গোরুরা যেখানে বিশ্রাম নিত
সেখানে মল বা গোবর ত্যাগ করত। পরে যখন সেই জায়গায় লাঙল টেনে চাষ করা হল তখন দেখা গেল ওই জমিতে ফলন অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি। এভাবেই মানুষ বুঝেছিল জমিতে গোবর দিলে ফলন ভালো হয়।
৪) প্রথমেই মানুষ লাঙল টানার জন্য কোনো পশুকে কাজে লাগায় নি কেন?
উত্তর:কারণ কোন জন্তু পোষ মানবে তা বুঝতে মানুষের অনেক সময় লেগে গিয়েছিল।
৫) কীটনাশক কি?
উত্তর:কীটনাশক হল একপ্রকার রাসায়নিক পদার্থ যা ব্যবহারের দ্বারা ফসলের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গকে বিনাশ করা হয়।
৬) আগেকার দিনে কীটনাশক হিসাবে কি ব্যবহার করা হত?
উত্তর:নিমপাতা।
চালের দাম চারগুণ
১) বর্তমানে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমতে শুরু করেছে কেন?
উত্তর:বর্তমানে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমতে শুরু করেছে কারণ বেশি পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা কমে যায়।
২) জমির বন্ধু কারা?
উত্তর:ছোট ছোট পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, কেঁচো প্রভৃতি।
৩) কয়েকটি অর্থকরী পোকার নাম লেখো।
উত্তর:মৌমাছি, প্রজাপতি, রেশমপোকা প্রভৃতি।
৪) ১৯৬৬ সালে চালের দাম কত গুণ বেড়ে গিয়েছিল?
উত্তর:চার গুণ বেড়েছিল।
৫) চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সময় কি খেয়ে থাকতে হত?
উত্তর:যব, মাইলো ও ভুট্টা।
৬) সবুজ বিপ্লব কাকে বলে?
উত্তর:১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কৃষিতে যে ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমূল পরিবর্তন ঘটে, তাকে সবুজ বিপ্লব বলে।
৭) টিকা লেখো: সবুজ বিপ্লব।
উত্তর:১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কৃষিতে যে ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমূল পরিবর্তন ঘটে, তাকে সবুজ বিপ্লব বলে।
উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার বৃদ্ধি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার, ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে জলসেচের ব্যবস্থা, কৃষিজ যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এর ফলে গমের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ধান, ডাল, তৈলবীজ প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। খাদ্যের আকাল কেটে যায়।
৮) সবুজ বিপ্লবের কুফলগুলি লেখো।
অথবা সাফল্য পাওয়া সত্ত্বেও সবুজ বিপ্লবের পদ্ধতিগুলি পরে আর অনুসরণ হচ্ছে না কেন?
উত্তর:• বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়।
•রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারে জমির বন্ধু পোকারা মারা যায়।
•ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে অধিক জল তোলার ফলে মাটির নীচে জলের সংকট দেখা যায়।
৯) বেশি রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহারের কুফলগুলি লেখো।
উত্তর:• বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়।
• রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারে জমির বন্ধু পোকারা মারা যায়।
১০) কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করলে ফসলের উৎপাদন আরও বাড়বে?
উত্তর:
• জৈব সার, অণুজীব সার এবং জৈব কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
• বিভিন্ন প্রকার উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহার করতে হবে।
• বৃষ্টির জল জমিয়ে রেখে তা পরে সেচের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে
১) গরমকালে এবং শীতকালে চাষ করা হয় এমন দুটি করে আনাজের উদাহরণ দাও।
উত্তর:
• গরমকালে চাষ হয়- পটল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়শ প্রভৃতি।
•শীতকালে চাষ হয়- আলু, পেঁয়াজ, বিট, গাজর, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি প্রভৃতি।
২) আগে কয় ধরণের ধান চাষ করা হত ও কি কি?
উত্তর:দুই ধরণের। আউশ ধান এবং আমন ধান।
৩) আউশ ধান কাকে বলে?
উত্তর:গ্রীষ্মকালে উঁচু জমিতে যে ধান চাষ করা হয়, সেই ধানই হল আউশ ধান। এই ধানের গাছ ছোট হয় এবং এই ধান চাষে জল কম লাগে। সাধারণত এপ্রিল মে মাসে চাষ করা হয়।
৪) আমন ধান কাকে বলে?
উত্তর:বর্ষাকালে জল দাঁড়ায় এমন নিচু জমিতে যে ধান চাষ করা হয়, সেই ধানই হল আমন ধান। এই ধানের গাছ বড় হয় এবং এই ধান চাষে জল বেশি লাগে। এই ধান সাধারণত জুন জুলাই মাসে চাষ করা হয়।
৫) কিসের সাহায্যে ধান এবং খড় আলাদা করা হত?
উত্তর:চেরা বাঁশ দিয়ে তৈরি ধান ঝাড়নের সাহায্যে।
৬) খড় থেকে ধান আলাদা করার কাজকে কি বলে?
উত্তর:ধান ঝাড়াই বলে।
৭) ধান কীভাবে ঝাড়াই করা হয়?
উত্তর:আগে চেরা বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হত ফাঁকা ফাঁকা একটা ধান ঝাড়ন। ধান সমেত খড় তার উপর পেটানো হত। এর ফলে খড় থেকে ধান আলাদা হয়ে ঝড়ে পড়ত। এভাবেই ধান ঝাড়াই করা হত। তবে বর্তমানে কম্বাইন হারভেস্টার দ্বারা ধান ঝাড়াই করা হয়।
৮) ধান সঞ্চয় করে রাখার ঘরকে কি বলা হয়?
উত্তর:ধানের গোলা।
৯) কীভাবে ধানের গোলা তৈরি করা হত?
উত্তর:প্রথমে খড় জড়িয়ে মোটা দড়ি তৈরি করা হত। ধান সঞ্চয়ের জন্য চেরা বাঁশের কাঠামো তৈরি করে তার উপর খড়ের মোটা দড়ি পেঁচিয়ে ধানের গোলা তৈরি করা হত। এরপর খড় দিয়ে ওই ঘরের ছাউনি দেওয়া হত।
১০) ধাপ চাষ কোন অঞ্চলে হয়?
উত্তর:পার্বত্য অঞ্চলে বা পাহাড়ি অঞ্চলে।
১১) ধাপ চাষ কাকে বলে?
উত্তর:পাহাড়ে ঢালু জমিতে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে জমি কেটে চাষ করাকে ধাপ চাষ বলে।
ওরে বৃষ্টি দূরে যা
১) দার্জিলিং জেলার প্রধান ফসল কি?
উত্তর:চা।
২) দার্জিলিং জেলায় কি কি ফসলের চাষ হয়?
উত্তর:চা, স্কোয়াশ, গম, ভুট্টা, আদা, সয়াবিন প্রভৃতি।
৩) পশ্চিমবঙ্গের কোন জেলায় স্কোয়াশ চাষ খুব ভালো হয়?
উত্তর:দার্জিলিং জেলায়।
৪) স্কোয়াশ কি?
উত্তর:স্কোয়াশ একরকমের সবজি যা পার্বত্য অঞ্চলে চাষ করা হয়। স্কোয়াশ গাছ দেখতে ঝিঙে গাছের মতো এবং স্কোয়াশ খেতে পেঁপের মতো। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে স্কোয়াশ চাষ হয়।
৫) পাহাড়ি অঞ্চলের অতি বৃষ্টির জল কোথায় যায়?
উত্তর:তিস্তা ও মহানন্দা নদীতে।
৬) দার্জিলিং জেলার ভূ-প্রকৃতি কেমন?
উত্তর:দার্জিলিং জেলার ভূমি ঢালু এবং কাঁকুরে। তাই প্রচুর বৃষ্টি হলেও এখানে জল দাঁড়ায় না।
তরাই আর মালদা- দক্ষিণ দিনাজপুরের কৃষি
১) তরাই অঞ্চল কাকে বলে?
উত্তর:পাহাড় বা পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিকে তরাই অঞ্চল বলে।
২) তরাই অঞ্চলের মাটি উর্বর হয় কেন?
উত্তর:তরাই অঞ্চলের একটি বিরাট অংশ পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত। তিস্তা, মহানন্দা প্রভৃতি পাহাড়ি নদীর পলি জমার ফলে তরাই অঞ্চলের মাটি উর্বর হয়।
৩) তরাই অঞ্চলের কয়েকটি ফসলের নাম লেখো।
উত্তর:তরাই অঞ্চলে প্রচুর ধান হয়। এছাড়া পাট, গম, বিভিন্নপ্রকার সবজি চাষ হয়। এছাড়াও কলা, আনারস, আম, লিচু প্রভৃতি ফল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।
৪) তরাই অঞ্চলে চা চাষ ভালো হয় কেন?
উত্তর:চা চাষের জন্য জল দাঁড়ায় না এমন ঢালু জমি প্রয়োজন। এছাড়া আবহাওয়া শীতল থাকার দরকার হয়। তরাই অঞ্চলের একটা বিরাট অংশ পর্বতের পাদদেশ থেকে সমতলভূমি পর্যন্ত ঢালু হওয়ায় সেখানে জল দাঁড়ায় না। এছাড়া এখানকার আবহাওয়া খুব বেশি গরমও নয়। তাই এই আবহাওয়ায় চা চাষ খুব ভালো হয়।
৫) কোন জেলা ফজলি আমের জন্য বিখ্যাত?
উত্তর:মালদা জেলা।
৬) মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় রেশম কীট পালনের জন্য কোন গাছের চাষ হয়?
উত্তর:তুঁত গাছের চাষ হয়।
৭) তরাই অঞ্চলের কৃষি সম্পর্কে কি জানো?
উত্তর:তিস্তা, মহানন্দা প্রভৃতি জমির পলি জমে তরাই অঞ্চলের মাটি উর্বর হয়েছে। এই উর্বর মাটিতে ধান, পাট, গম, বিভিন্নপ্রকার সবজি চাষ হয়। এছাড়াও আনারস, কলা প্রভৃতি ফলও প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। মালদা জেলার ফজলি আম বিখ্যাত। এছাড়া তরাই এর অনুর্বর অঞ্চলে রেশমকীট পালনের জন্য তুঁত গাছের চাষ করা হয়।
গাঙ্গেয় বদ্বীপ ও রাঢ় অঞ্চলের কৃষি
১) দামোদরের দুই পাশের জমিতে কোন ফসলের চাষ হয়?
উত্তর:আলুর চাষ হয়।
২) আলুর পাতা দিয়ে কি তৈরি হয়?
উত্তর:জমির সার তৈরি হয়।
৩) আলুর পাশাপাশি সাথী ফসল হিসাবে কিসের চাষ হয়?
উত্তর:সরষের চাষ হয়।
৪) কোন জেলার মাটি ধান চাষের জন্য খুব ভালো?
উত্তর:বর্ধমান জেলার মাটি।
৫) বর্ধমান জেলা ধান চাষের জন্য ভালো কেন?
উত্তর:বর্ধমান জেলা গাঙ্গেয় উপত্যকার সমভূমি অঞ্চলে অবস্থিত। এজন্য মাটি পলিযুক্ত দোআঁশ প্রকৃতির হয়। এই মাটি ধান চাষের জন্য উপযুক্ত।
• এই জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ধান চাষের পক্ষে উপযুক্ত।
এই জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলি থেকে ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জল পাওয়া যায়।
৬) গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে কি কি ফসলের চাষ হয়?
উত্তর:ধান, গম, পাট, আলু, ডাল, প্রভৃতি।
৭) ক্ষেতে সারা বছর থেকে যায় এমন দুটি গাছের নাম লেখো।
উত্তর:পেঁপে এবং কলা।
৮) কোন নদের উপর ডিভিসি গড়ে উঠেছে?
উত্তর:দামোদর নদীর উপর।
৯) ডি ভি সি এর পুরো কথা কি?
উত্তর:দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন।
১০) ডিভিসি গঠন করার উদ্দেশ্য কি ছিল?
উত্তর:ডিভিসি গঠন করার উদ্দেশ্য ছিল বন্যা বন্ধ করা এবং বর্ষার সময় অতিরিক্ত জলকে ধরে রেখে অন্য সময় সেই জলকে জলসেচের কাজে ব্যবহার করা।
১১) ডিভিসির উদ্দেশ্য সফল হয়নি কেন?
উত্তর:ডিভিসির উদ্দেশ্য সফল হয়নি। কারণ ডিভিসির ছাড়া জলকে ধরে রাখার মতো জলাধার তৈরি করা যায়নি।
১২) ডিভিসি করার ফলে কি সুবিধা ও কি অসুবিধা সৃষ্টি হল?
উত্তর:
সুবিধা-
ডিভিসির বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণের ফলে দামোদর নদীর নিম্ন উপত্যকা অঞ্চল বন্যার হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
ডিভিসির জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় যা আশেপাশের এলাকার কাজে লাগে।
• বাঁধ নির্মাণের ফলে বৃষ্টিহীন সময়ে জলসেচের ব্যবস্থা সম্ভব হয়েছে।
অসুবিধা- বর্ষার সময় জলাধার থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলে প্রায়ই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
১৩) ডিভিসি থাকা সত্ত্বেও গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে বন্যা হয় কেন?
উত্তর:ডিভিসি থাকা সত্ত্বেও গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে বন্যা হয়। কারণ- ডিভিসির যতগুলি জলাধার তৈরি করার কথা ছিল ততগুলি তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তাই বর্ষার জলের পরিমাণ অত্যাধিক বেড়ে গেলে ডিভিসি জল ছাড়তে বাধ্য হয়। ফলে জল ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বন্যা হয়।
পানের চাষ, ফুলের চাষ
১) পশ্চিমবঙ্গের কোন কোন জেলায় বেশি আমের বাগান দেখা যায়?
উত্তর:মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া এবং উত্তর চব্বিশ পরগণা।
২) পশ্চিমবঙ্গের কোনদিকে নারকেল সুপারি প্রভৃতি গাছ বেশি হয়?
উত্তর:দক্ষিণদিকে।
৩) ফুল চাষের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি?
উত্তর:দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা।
৪) শহরের কাছাকাছি অঞ্চলে ফুলের চাষ বেশি হয় কেন?
উত্তর:শহরে ফুলের চাহিদা এবং বাজারদর বেশি। এছাড়া শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। তাই শহরের কাছাকাছি অঞ্চলে ফুলের চাষ বেশি হয়।
পশ্চিমে পাহাড়ি লাল মাটির কৃষি
১) পশ্চিমের পাহাড়ি অঞ্চলে কি প্রকার মাটি দেখা যায়?
উত্তর:কাঁকুড়ে লালমাটি দেখা যায়।
২) কোন কোন ফসল চাষে জল কম লাগে?
উত্তর:মটর, মুসুর, বিউলি, অড়হর, বরবটি, সিম প্রভৃতি ফসল।
৩) পাহাড়ি লাল মাটিতে কীভাবে ধানের চাষ হয়?
উত্তর:মানুষ উঁচু জায়গা থেকে মাটি কেটে ঢালের দিকে ফেলে ভরাট করে ছোট ছোট জমি তৈরি করে। এরপর আল দিয়ে বর্ষার জল আটকে উচ্চফলনশীল ধান চাষ করে।
৪) পশ্চিমের পাহাড়ি লাল মাটির কৃষির পরিচয় দাও।
উত্তর:দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমের পাহাড়ি অঞ্চলের কাঁকুড়ে লাল মাটিতে প্রধানত মটর, মুসুর, বিউলি, অড়হর, বরবটি, সিম প্রভৃতি চাষ হয়। এই অঞ্চলে বৃষ্টি কম হওয়ায় ধান চাষ কম হয়। তবে বর্তমানে এই অঞ্চলের মানুষ উঁচু জায়গা থেকে মাটি কেটে ঢালের দিকে ফেলে ভরাট করে ছোট ছোট জমি তৈরি করে। এরপর আল দিয়ে বর্ষার জল আটকে উচ্চফলনশীল ধান চাষ করে।
দক্ষিণের নোনা জমির কৃষি ও মাছ চাষ
১) বিঘা প্রতি কোন ধানের ফলন কম হয়?
উত্তর:আমন ধানের ফলন।
২) কোন অঞ্চলের পেয়ারা বিখ্যাত?
উত্তর:বারুইপুর অঞ্চলের।
৩) কোন অঞ্চলে খুব কাজুবাদাম চাষ হয়?
উত্তর:দীঘা।
৪) ভেড়ি বলতে কি বোঝো?
উত্তর:ভেড়ি হল মানুষের তৈরি একপ্রকার বদ্ধ জলাশয় যেখানে জল ধরে রেখে নানাপ্রকার মাছ চাষ করা হয়। ভেড়ি দেখতে পুকুরের মতো হলেও এর বিস্তার অনেক বেশি।
৫) ভেড়িতে কি কি মাছের চাষ হয়?
উত্তর:পারসে, ট্যাংরা, ভেটকি, পাবদা, রুই, কাতলা, মৃগেল, বাগদা চিংড়ি, গলদা চিংড়ি প্রভৃতি।
৬) মানুষ কিসে করে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়?
উত্তর:নৌকা এবং ট্রলার।
৭) হলদিয়া ও দিঘা কোন উপকূলে অবস্থিত?
উত্তর:বঙ্গোপসাগর উপকূলে।
৮) সমুদ্রের খুব কাছাকাছি অঞ্চলের মাটি চাষের জন্য ভালো নয় কেন?
উত্তর:সমুদ্রের কাছাকাছি অঞ্চলের মাটিতে প্রচুর পরিমাণে নুন থাকে। এই নোনা মাটি চাষের পক্ষে উপযুক্ত নয়। ফলে ফসল উৎপাদনের হার কম হয়।
৯) দক্ষিণের মাছ চাষ সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তর:দক্ষিণে সমুদ্রের কাছাকাছি অঞ্চলে নুনের পরিমাণ বেশি থাকে। সেইজন্য এখানকার মানুষ চাষ না করে জমিতে জল আটকে ভেড়ি বানান। এই ভেড়িতে পারসে, ট্যাংরা, ভেটকি, পাবদা, রুই, কাতলা, মৃগেল, বাগদা চিংড়ি, গলদা চিংড়ি প্রভৃতি মাছের চাষ করা হয়।
অনেকরকম মাছ
১) কোন কোন মাছ ধানক্ষেতে পাওয়া যেত?
উত্তর:কই, শিঙি, মাগুর, মৌরলা, পুঁটি, শোল, চ্যাং, ফলুই প্রভৃতি মাছ।
২) ধানক্ষেতে থাকা মাছের বাচ্চাদের কারা খেয়ে নিত?
উত্তর:কোলাব্যাঙ, জলঢোঁড়া সাপ।
৩) বর্তমানে ধানক্ষেতে মাছ চাষ হয় না কেন?
উত্তর:জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছড়ানোর জন্য বর্তমানে ধানক্ষেতে মাছ চাষ হয় না।
৪) কোন মাছ লেজে ভর দিয়ে খানিকটা লাফাতে পারে?
উত্তর:চ্যাং মাছ।
৫) ছোট ডোবা বা পুকুরে মাছ চাষের প্রধান অন্তরায় কি?
উত্তর:জিওল মাছের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।
৬) জিওল মাছ বলতে কি বোঝো? উদাহরণ দাও।
উত্তর:যে সকল মাছ কাদাময়, কম অক্সিজেনযুক্ত জলে বেঁচে থাকতে পারে, আবার জল ছাড়াও অনেকটা সময় বেঁচে থাকতে পারে, তাদের জিওল মাছ বলে। যেমন- শিঙি, মাগুর প্রভৃতি।
আরও অনেকরকম মাছ ও লুপ্তপ্রায় মাছ
১) লুপ্তপ্রায় মাছ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর:যে সমস্ত মাছের সংখ্যা বর্তমানে খুব কমে গেছে, যাদের সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যতে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে, তাদের লুপ্তপ্রায় মাছ বলে। যেমন- ন্যাদোশ, সরপুঁটি, খলসে, খরশুলা প্রভৃতি মাছ।
২) লুপ্তপ্রায় মাছগুলির লুপ্ত হয়ে যাওয়ার কারণ কি?
উত্তর:বিভিন্ন লুপ্তপ্রায় মাছ অর্থাৎ সরপুঁটি, ন্যাদোশ, খলসে, খরশুলা প্রভৃতি মাছ নিচু জলাজমি বা ধানক্ষেতে ডিম পারত ও বংশবৃদ্ধি করত। কিন্তু বর্তমানে জমিতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রভৃতি ব্যবহারের ফলে এই সমস্ত মাছের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। এছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন জলাজমি বুজিয়ে বাড়িঘর, কলকারখানা প্রভৃতি তৈরি হওয়ার ফলে এইসব মাছের প্রজনন ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে।
৩) কীভাবে লুপ্তপ্রায় মাছ বাঁচানো যেতে পারে?
উত্তর:
• কোন কোন মাছ লুপ্তপ্রায় তার একটা তালিকা তৈরি করে সেই সব মাছ ধরা নিষিদ্ধ করতে হবে।
• লুপ্তপ্রায় মাছ বাজারে কেনাবেচা বন্ধ করতে হবে। কেনাবেচা করলে আর্থিক জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে।
• পঞ্চায়েতের মাধ্যমে লুপ্তপ্রায় মাছের ডিম বা চারামাছ বিলি করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
লুপ্তপ্রায় মাছ বাঁচাও
১) কোন কোন মাছ রুই কাতলার পোনা খেয়ে শেষ করে?
উত্তর:শোল, শাল, বোয়াল প্রভৃতি মাছ।
২) জলের মধ্যে গাছ থাকলে সেখানে কোন কোন মাছ থাকে?
উত্তর:কই, শিঙি, মাগুর, খলসে, ন্যাদোশ প্রভৃতি।
৩) মাছ ধরার সময় বড় ফাঁদির জাল ব্যবহার করা উচিৎ কেন?
উত্তর:বড় ফাঁদির জাল ব্যবহার করলে পুঁটি, মৌরলার মতো ছোট ছোট মাছ জালে ধরা পড়বে না।
৪) ফাঁদি কি?
উত্তর:ফাঁদি হল জালের সুতো দিয়ে তৈরি একটা খোপ। একটি জালে অসংখ্য ফাঁদি থাকে।
মাছ ধরা
১) মাছ ধরার জন্য কি কি জিনিস ব্যবহার হয়?
উত্তর:জাল, ছিপ, ঘুনি, পোলো ইত্যাদি জিনিস ব্যবহার করা হয়।
২) মাছ ধরার দুটি কৌশলের নাম লেখো।
উত্তর:জাল ফেলা ও ছিপ ফেলা।
৩) স্রোতযুক্ত জলে কিসের সাহায্যে মাছ ধরা হয়?
উত্তর:ঘুনির সাহায্যে।
৪) ঘুনি কাকে বলে? ঘুনি দিয়ে কীভাবে মাছ ধরা হয়?
উত্তর:বর্ষাকালে মাছ ধরার জন্য স্রোতের মুখে বাঁশের শলা দিয়ে তৈরি যে বিশেষ খাঁচা ব্যবহার করা হয়, তাকে ঘুনি বলে।
স্রোতের মুখে ঘুনি বসালে জলের সঙ্গে মাছ ঘুনির মধ্যে ঢোকে, কিন্তু বেরোতে পারে না।
৫) পোলো কাকে বলে? পোলো দিয়ে কীভাবে মাছ ধরা হয়?
উত্তর:অল্প কাদা জলে মাছ ধরার জন্য চেরা বাঁশ দিয়ে তৈরি যে বিশেষ খাঁচা ব্যবহার করা হয়, তাকে পোলো বলে।
মাছের চারপাশ পোলো দিয়ে ঘিরে ফেলতে হয় এবং পড়ে উপর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মাছ বের করে নিতে হয়।