অষ্টম শ্রেণীর ভূগোল
দ্বিতীয় অধ্যায়-অস্থিত পৃথিবী
অষ্টম শ্রেণীর ভূগোল বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়-অস্থিত পৃথিবী থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর। এর মধ্যে থেকে পরীক্ষায় আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। গত সাত বছরের অষ্টম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্নপত্র পর্যবেক্ষণ করে লেখা প্রশ্ন উত্তর।West Bengal Board Class 8 History lesson 2 important questions answers suggestion.
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর
১) মহীসঞ্চরণ তত্ত্বের প্রবক্তা কে?
উত্তর:অ্যালফ্রেড ওয়েগনার।
২) মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব অনুসারে বিশাল আকৃতির মহাদেশটির নাম কি?
উত্তর:প্যানজিয়া।
৩) প্লেট বা পাত শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?
উত্তর:ভূ-বিজ্ঞানী উইলসন।
৪) পৃথিবীপৃষ্ঠ কতগুলি পাতের সমন্বয়ে গঠিত?
উত্তর:৬ বা ৭ টি বড় পাত এবং ২০ টি মাঝারি ও ছোট পাতের সমন্বয়ে।
৫) পাতসংস্থান তত্ত্বের জনক কাকে বলা হয়?
উত্তর:পিঁচো কে।
৬) কোন স্রোতের প্রভাবে পাতগুলি চলমান হয়?
উত্তর:পরিচলন স্রোতের প্রভাবে।
৭) অগ্ন্যুদগম কাকে বলে?
উত্তর:ভূ-গর্ভের উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা যখন ভূ-ত্বকের কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথে বিস্ফোরণ সহ অথবা শান্তভাবে ভূ-পৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে আসে, তখন সেই ঘটনাকে অগ্ন্যুদগম বলে।
৮) আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত কাকে বলে?
উত্তর:বারবার অগ্নুৎপাতের ফলে আগ্নেয় পদার্থ ভূ-পৃষ্ঠের কোনো ফাটলের চারদিকে জমে শঙ্কু - আকৃতির যে পর্বত সৃষ্টি করে, তাকে আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত বলে।
৯) আগ্নেয় পর্বতকে কেন সঞ্চয়জাত পর্বত বলে?
উত্তর:আগ্নেয় পদার্থের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্টি হয় বলে আগ্নেয় পর্বতকে সঞ্চয়জাত পর্বত বলে।
১০) সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?
উত্তর:যেসব আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে অবিরামভাবে অগ্নুৎপাত ঘটিয়ে চলেছে, তাদের সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন- ভারতের ব্যারেন, ইতালির ভিসুসিয়াস, হাওয়াই দ্বীপের মৌনালেয়া প্রভৃতি।
১১) সুপ্ত আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?
উত্তর:যেসব আগ্নেয়গিরি একবার অগ্নুৎপাতের পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত নিস্ক্রিয় থাকে, তাকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন- জাপানের ফুজিয়ামা, ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া প্রভৃতি।
১২) মৃত আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?
উত্তর:যেসব আগ্নেয়গিরি থেকে অতি প্রাচীনকাল থেকে অগ্নুৎপাত ঘটলেও ভবিষ্যতে অগ্নুতপাত ঘটার সম্ভাবনা প্রায় নেই, তাকে মৃত আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন- মায়ানমারের পোপো, মেক্সিকোর পারকুতিন প্রভৃতি।
১৩) কয়েকটি উদাহরণ দাও।
উত্তর:
• নবীন ভঙ্গিল পর্বত- রকি, আন্দিজ, আল্পস, হিমালয় প্রভৃতি।
প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত- আরাবল্লী, উরাল প্রভৃতি।
১৪) প্রাচীন ও নবীন ভঙ্গিল পর্বত কত বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে?
উত্তর:প্রাচীন- ২০ কোটি বছরেরও আগে।
• নবীন- ১ থেকে ২.৫ কোটি বছর আগে।
১৫) পৃথিবীর সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি কোনটি?
উত্তর:হাওয়াই দ্বীপের মৌনালেয়া।
১৬) পৃথিবীর বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরি কোন মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত?
উত্তর:প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।
১৭) কোন আগ্নেয়গিরি ভূমধ্যসাগরীয় আলোকস্তম্ভ নামে পরিচিত?
উত্তর:সিসিলির স্ট্রম্বোলি আগ্নেয়গিরি।
১৮) অপসারী বা গঠনকারী পাত সীমানা কাকে বলে?
উত্তর:যে পাত সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়, তাকে অপসারী বা গঠনকারী পাত সীমানা বলে।
১৯) অভিসারী বা বিনাশকারী পাত সীমানা কাকে বলে?
উত্তর:যে পাত সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়, তাকে অভিসারী বা বিনাশকারী পাত সীমানা বলে।
২০) কোন পাত সীমানায় ভূ-ত্বক বা পাত সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না?
উত্তর:নিরপেক্ষ পাত সীমানায়।
২১) মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা কি প্রকার পাত সীমান্তে অবস্থিত?
উত্তর:অপসারী বা গঠনকারী পাত সীমান্তে।
২২) প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত বছরে কত সেমি করে সরে যাচ্ছে?
উত্তর:১০ সেমি করে।
২৩) সান আন্দ্রিজ চ্যুতি কি প্রকার পাত সীমানার উদাহরণ?
উত্তর:নিরপেক্ষ পাত সীমানার।
২৪) সান আন্দ্রিজ ফল্ট (চ্যুতি) এর উপর অবস্থিত দুটি শহরের নাম লেখ।
উত্তর:সান ফ্রান্সিসকো এবং লস অ্যাঞ্জেলস।
২৫) কোন দুটি পাতের সংঘর্ষে হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে?
উত্তর:ভারতীয় পাত এবং ইউরেশীয় পাতের সংঘর্ষে।
২৬) ভূমিকম্পের কেন্দ্র কাকে বলে?
উত্তর:পৃথিবীর অভ্যন্তরে যে স্থানে ভূমিকম্প তরঙ্গ উৎপন্ন হয়, তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে।
২৭) ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র কাকে বলে?
উত্তর:ভূমিকম্প কেন্দ্রের ঠিক উপরে যে বিন্দুতে ভূমিকম্প তরঙ্গ প্রথম পৌঁছায়, সেই বিন্দুকে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র বলে।
২৮) ভূমিকম্প তরঙ্গ কয় প্রকার ও কি কি?
উত্তর:তিন প্রকার। প্রাথমিক বা P তরঙ্গ, দ্বিতীয় পর্যায়ের তরঙ্গ বা S তরঙ্গ এবং পৃষ্ঠ বা L তরঙ্গ।
২৯) কোন তরঙ্গ শুধু কঠিন পদার্থ দিয়ে প্রবাহিত হয়?
উত্তর:S তরঙ্গ।
৩০) কোন পদার্থ সব মাধ্যম দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে?
উত্তর:প্রাথমিক বা P তরঙ্গ।
৩১) কোন তরঙ্গ সবচেয়ে দ্রুতগামী?
উত্তর:প্রাথমিক বা P তরঙ্গ।
৩২) ভূমিকম্পের কোন তরঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়?
উত্তর:পৃষ্ঠ বা L তরঙ্গে।
৩৩) ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি ও তীব্রতার মাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের নাম কি?
উত্তর:রিখটার স্কেল।
৩৪) রিখটার স্কেলের সর্বোচ্চ মান কত?
উত্তর:১০
৩৫) ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রের নাম কি?
উত্তর:সিসমোগ্রাফ।
৩৬) সিসমোগ্রাম কি?
উত্তর:সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে যে লেখচিত্রে ভূমিকম্প ধরা পড়ে, তাকে সিসমোগ্রাম বলে।
৩৭) ভারতের সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল কোনটি?
উত্তর:হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল।
৩৮) পৃথিবীর দীর্ঘতম ভঙ্গিল পর্বত কোনটি?
উত্তর:আন্দিজ পর্বত।
৩৯) ব্লাক সয়েল (BLACK SOIL) কি?
উত্তর:দাক্ষিণাত্য মালভূমির উর্বর কৃষ্ণ মৃত্তিকা।
৪০) 'আ আ' এবং 'পা হো হো' কি?
উত্তর:
• আ আ- ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরি থেকে একপ্রকার গাঢ়, অর্ধতরল লাভা নির্গত হয়। হাওয়াই দ্বীপের ভাষায় একেই 'আ আ' বলা হয়। এই লাভা বেশিদূর প্রবাহিত হয় না।
• পা হো হো- হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের আগ্নেয়গিরিগুলো থেকে অত্যন্ত পাতলা লাভা বেড়িয়ে বহুদুর প্রবাহিত হয়। হাওয়াই দ্বীপের ভাষায় একেই 'পা হো হো' বলে।
৪১) অভিসারী পাত সীমানাকে বিনাশকারী পাত সীমানা বলে কেন?
উত্তর:অভিসারী পাত সীমানায় দুটি পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়। একে বিনাশকারী পাত সীমানা বলার কারণ-
• দুটি পাতের মধ্যে সংঘর্ষে ভারী পাতটি হালকা পাতের নীচে প্রবেশ করে এবং পাতটির নিমজ্জিত অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
• এই সীমান্ত বরাবর ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাতের মতো ঘটনা ঘটে থাকে। ফলে সীমান্তটি সর্বদা অস্থির থাকে।
৪২) অপসারী পাত সীমানাকে গঠনকারী পাত সীমানা বলে কেন?
উত্তর:অপসারী পাত সীমানায় দুটি পাত পরস্পরের থেকে দূরে সরে যায়। ফলে ভূ-ত্বকে ফাটল সৃষ্টি হয় এবং ফাটল বরাবর ভূ-গর্ভের গলিত ম্যাগমা বেরিয়ে এসে নতুন ভূ-ত্বক গঠন করে। তাই একে গঠনকারী পাত সীমানা বলে।
৪৩) আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চল অথবা নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ হয় কেন?
উত্তর:
• এই অঞ্চলে পর্বত গঠন প্রক্রিয়া বর্তমানেও কার্যকরী থাকায় অঞ্চলটি অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ।
• এই অঞ্চলে শিলাস্তরে অধিক মাত্রায় চ্যুতি সৃষ্টি হয় বলে এটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় পরিণত হয়েছে।
৪৪) পাত সঞ্চালন আমরা বুঝতে পারি না কেন?
উত্তর:পৃথিবীর পাতসমূহ বিভিন্ন গতিতে বহিঃগুরুমন্ডলের অ্যান্থেনোস্ফিয়ারের উপর অনুভূমিকভাবে সঞ্চারিত হয়। যেমন- প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত বছরে ১০ সেমি করে এবং আমেরিকান পাত বছরে ২ থেকে ৩ সেমি করে পশ্চিমে সরে যাচ্ছে। এই পাতের সঞ্চালন এত ধীরগতিতে এবং সুদীর্ঘ সময় ধরে হয় যে, আমরা তা বুঝতে পারি না।
৪৫) প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা কি?
উত্তর:প্রশান্ত মহাসাগরকে বেষ্টন করে এর উভয় পাশে এশিয়ার পূর্ব উপকূল এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের পাত সীমানা বরাবর আগ্নেয়গিরিগুলি সংকীর্ণ বলয়ের মধ্যে সজ্জিত বলে একে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বলে।
৪৬) প্রশান্ত মহাসাগরের দুপাশে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি তৈরি হয়েছে কেন?
উত্তর:প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল বরাবর অভিসারী পাত সীমান্ত অবস্থান করেছে। পূর্ব উপকূলে আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষের কারণে এবং পশ্চিম উপকূলে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া পাতের সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষের কারণেই অসংখ্য আগ্নেয়গিরি গড়ে উঠেছে।
৪৭) প্রশান্ত মহাসাগরীয় অগ্নিবলয়ে অবস্থিত দুটি আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।
উত্তর:জাপানের ফুজিয়ামা, ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া।
৪৮) 'প্রশান্ত মহাসাগর অগ্নিবলয়' ভূমিকম্পপ্রবণ কেন?
উত্তর:পৃথিবীর অধিকাংশ জীবন্ত আগ্নেয়গিরি প্রশান্ত মহাসাগরকে বলয়ের মতো ঘিরে রেখেছে। অধিকাংশ আগ্নেয়গিরি পাত সীমানায় অবস্থান করায় অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে থাকে। এই কারণে প্রশান্ত মহাসাগর অগ্নিবলয় অত্যন্ত ভুমিকম্পপ্রবণ। পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশ ভূমিকম্প এই বলয়েই অবস্থান করে।
৪৯) সান ফ্রান্সিসকো এবং লস অ্যাঞ্জেলস শহরে বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ কেন?
উত্তর:এই শহর দুটি সান আন্দ্রিজ চ্যুতির মধ্যে অবস্থান করেছে। এই অঞ্চলে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত উত্তরে এবং উত্তর আমেরিকা পাত দক্ষিণে পাশাপাশি অগ্রসর হচ্ছে। ফলে এই অঞ্চলটি ভূ-গাঠনিকভাবে অত্যন্ত অস্থির। প্রায়ই এই অঞ্চলে ভূমিকম্প ঘটতে থাকে। তাই এই শহর দুটিতে বসবাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
৫০) ভূমিকম্পের ফলাফলগুলি লেখ।
উত্তর:
• ভূমিকম্পের ফলে অসংখ্য মানুষ ও জীবজন্তুর মৃত্যু হয়। এছাড়া গাছপালা ও ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়।
• ভূ গর্ভস্থ জলের পাইপ, গ্যাসের পাইপ, তেলের পাইপ সব ছিঁড়ে যায় এবং এই সকল পরিষেবা ব্যহত হয়।
• রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, সেতু, বাঁধ সব কিছু ভেঙে পড়ে। এছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলে ধস নেমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়।
আরও দেখুন: