উচ্চমাধ্যমিক(HIGH SECONDARY)রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর pdf: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক । HS Political science Question and Answers pdf : উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান – প্রথম অধ্যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রশ্ন ও উত্তর pdf | HS Political science Question and Answer নিচে দেওয়া হলো। এই দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর – WBCHSE Class 12 Political science Question and Answer, Suggestion, Notes ,pdf প্রথম অধ্যায়– আন্তর্জাতিক সম্পর্ক থেকে, অতিসংক্ষিপ্ত,সংক্ষিপ্ত, এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর ( Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal Class 12th Twelve XII Political science Examination – পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য খুবই উপকারী ।
উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান – প্রথম অধ্যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রশ্ন ও উত্তর
অতিসংক্ষিপ্ত ও সংক্ষিপ্ত
1. কবে থেকে বিশ্বায়ন কথাটি মূলত চালু হয়েছে?
Ans. নয়ের দশক থেকে
2.বিশ্বায়নের মাধ্যমে মুক্ত দুনিয়ার স্বপ্ন কারা দেখেন?
Ans. উদারপন্থীরা
3. 'ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তি কবে হয় ?
Ans.1648 খ্রিস্টাব্দে
4. সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কীরূপ বিশ্বব্যবস্থা গড়ে ওঠে?
Ans. একমেরু কেন্দ্রিক
5. কত খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের পতন ঘটে?
Ans. 1991 খ্রিস্টাব্দে
6. একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের প্রধান দেশের নাম লেখ।
Ans. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
7. কোন্ প্রধানমন্ত্রীর আমলে ভারতবর্ষে প্রকৃত বিশ্বায়নের সূচনা হয়েছে?
Ans. নরসিমা রাও
8. রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল কোন বিঞ্জান?
Ans. সামাজিক বিজ্ঞান
9. Twenty Years Crisis' গ্রন্থটির কে লেখেন?
Ans. ই. এইচ. কার
10. "রাজনৈতিক ক্ষমতা এক ধরনের সামর্থ্য” উক্তিটি কার?
Ans. শ্লেইচার
11. দ্য প্রিন্স গ্রন্থের রচয়িতা কে ?
Ans. ম্যাকিয়াভেলি
12. “রাজনীতি শক্তিনির্ভর”-কে বলেছেন?
Ans. ই. এইচ. কার
13. Politics Among Nations গ্রন্থটির রচয়িতা কে ?
Ans :হ্যান্স. জে. মর্গেন থাউ
14. বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (WTO) কবে গঠিত হয়?
Ans.1995 খ্রিস্টাব্দে
15. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কবে সংঘঠিত হয়েছিল ?
Ans.1914 খ্রিস্টাব্দে
16. জাতীয় শক্তি যে ক-টি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত?
Ans. 06 টি
17. জাতিসংঘ বা লিগ অব নেশনস্ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ?
Ans. 1920 খ্রিস্টাব্দে
18. Globalization and its Discontents গ্রন্থের লেখক কে?
Ans. জোসেফ স্টিগলিৎস
19. আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে মূলত ক্ষমতার লড়াই বলে কে বোঝাতে চেয়েছেন ?
Ans. হ্যান্স. জে. মর্গেনথাউ
20. দ্য গ্রেট ইলিউশন গ্রন্থটির রচয়িতা কে ছিলেন?
Ans. নর্মান অ্যাঞ্জেল
21. দ্বিমেরু রাজনীতির কবে অবসান ঘটে ?
Ans. 1991 খ্রিস্টাব্দে
22. ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভব কবে ঘটে?
Ans. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে
23. কবে একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে ?
Ans. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে
24. বিশ্বায়নকে 'দারিদ্র্যের বিশ্বায়ন' বলে কে অভিহিত করেছেন ?
Ans. স্টিগলিৎস্
25. রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে প্রগতিশীল বিজ্ঞান উক্তিটি কার ?
Ans. লর্ড ব্রাইস
26. কাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে ?
Ans.বহু রাষ্ট্রের মধ্যে
27. 1971 খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত 'মন্ট্রিয়াল চুক্তি-র কি উদ্দেশ্য ছিল ?
Ans. আকাশপথে সন্ত্রাসবাদী হামলা প্রতিরোধ
28. কবে সন্ত্রাসবাদী সংস্থা আল-কায়দার বিমান হানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ইমারত ধূলিস্যাৎ হয় ?
Ans. 2001 খ্রিস্টাব্দের 11 সেপ্টেম্বর
29.কত খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় কমিউনিস্টরা ক্ষমতা লাভ করে ?
Ans. 1917 খ্রিস্টাব্দে
30. কত খ্রিস্টাব্দে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলসনের ‘চোদ্দ দফা প্রস্তাব' উত্থাপিত হয়?
Ans. 1918 খ্রিস্টাব্দে
31. কত খ্রিস্টাব্দে চিনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসে ?
Ans. 1949 খ্রিস্টাব্দে
32. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে শুরু হয়?
Ans.1939 খ্রিস্টাব্দে
33. কত খ্রিস্টাব্দে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা U.N.O গঠিত হয়?
Ans. 1945 খ্রিস্টাব্দে
34. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বাস্তববাদী তত্ত্বের প্রবক্তা কে ছিলেন?
Ans. মর্গেন থাউ
35. লেনিনের শান্তির জন্য অনুশাসন' বা 'ডিক্রি অন্ পিস' কবে গৃহীত হয়েছিল ?
Ans. 1917 খ্রিস্টাব্দের ৪ নভেম্বর
36. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বহুত্ববাদী গোষ্ঠীর প্রধান প্রবক্তা কে ছিলেন ?
Ans. রবার্ট কেওহান
37. কোন্ বছর প্যারিসে ইউনেস্কো বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের এক সম্মেলন আহ্বান করে?
Ans. 1948 খ্রিস্টাব্দে
38. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনার ক্ষেত্রে নয়া বাস্তববাদী তত্ত্বের প্রবক্তা কে ছিলেন ?
Ans. কেনেথ ওয়াল্ জ
39. কূটনীতি কাকে বলে ?
Ans: জাতীয় রাষ্ট্রগুলি যে নীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা নির্ধারণ করে তাকে কূটনীতি বলে।
40. গৌণ জাতীয় স্বার্থ কাকে বলে ?
Ans: একটি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সঙ্গে জড়িত না হলেও যেসব স্বার্থ রক্ষা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়, সেই স্বার্থগুলিকে গৌণ জাতীয় স্বার্থ বলে।
41. ন্যাটো (NATO)-এর পুরো অর্থ কী ?
Ans: নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন।
42. 'হায়ার অ্যান্ড ফায়ার' নীতি কী?
Ans: হায়ার অ্যান্ড ফায়ার নীতিটি হল কাজ থাকলে শ্রমিকদের ডেকে নেওয়া এবং কাজ না থাকলে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া।
43. রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার ক-টি দিক্ ও কী কী ?
Ans: রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার দুটি দিক্ দিকগুলি হল- অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক।
44. IMF এর পুরো নাম কী ?
Ans: ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড।
45. 'ডিক্রি অন্ পিস্' কী ?
Ans: সোভিয়েত সরকার গোপন কূটনীতি বিলোপ করে জনগণের সামনে প্রকাশ্যে যাবতীয় আপস মীমাংসা করার ব্যাপারে যে দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করেন তাই হল 'ডিক্রি অন্ পিস'।
46. WTO-এর পুরো নাম কী ?
Ans: WTO-এর পুরো নাম হল ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন।
47. WHO-এর পুরো নাম কী ?
Ans: ওয়ার্ল্ড হেলথ্ অর্গানাইজেশন।
48. মুখ্য জাতীয় স্বার্থ বলতে কী বোঝায়?
Ans: যেসব স্বার্থ সংরক্ষণকে প্রতিটি জাতি রাষ্ট্র আবশ্যিক কর্তব্য বলে মনে করে, সেই স্বার্থগুলিকে মুখ্য জাতীয় স্বার্থ বলে।
49. অস্টিনের মতে সার্বভৌমিকতা কী?
Ans: অস্টিনের মতে সার্বভৌমিকতা হল অধস্তনের প্রতি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশ বা নির্দেশ ।
রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
জাতীয় শক্তি কাকে বলে? জাতীয় শক্তির উপাদানগুলি আলোচনা করো। [H.S. 08, 10, 12, 14, 16, 18, 20]
অথবা,
ক্ষমতা কাকে বলে? ক্ষমতার উপাদানগুলো আলোচনা করো। 2+6
Ans : ক্ষমতা বা শক্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল 'Power'। যার অর্থ হল সক্ষমতা। জোসেফ ফ্র্যাঙ্কেলের মতে অন্যের মন ও কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে কাঙ্খিত ফললাভের সামর্থ্যই হল ক্ষমতা বা শক্তি। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় জাতীয় শক্তি বা তার ধারণা গুরুত্বপূর্ণ। মরগেন থাউ-এর মতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ক্ষমতার লড়াই। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনো একটি রাষ্ট্র কী অবস্থান নেবে তা নির্ভর করে ক্ষমতার উপর। যেমন—বর্তমান বিশ্বরাজনীতিতে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে। ক্ষমতা বা শক্তির উপাদানগুলি নিম্নরূপ-
(a) ভৌগোলিক উপাদান : মরগেনথাউ-এর মতে ভৌগোলিক উপাদনটি হল কোনো একটি দেশের জাতীয় শক্তির স্থায়ী উপাদান। জাতীয় শক্তির নির্ধারক হিসেবে ভৌগোলিক উপাদানটিকে চারটি দিক থেকে আলোচনা করা যায়-
(i) অবস্থান : কোনো একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান সামরিক ও বৈদেশিক শত্রুর হাত থেকে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। যেমন- বলা যায়, পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বৃহ শক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক অবস্থান এমনভাবে সমুদ্রবেষ্টিত যে ইউরোপ ও এশিয়ার কোনো স্থল শক্তির পক্ষে তাকে আক্রমণ করা সহজ নয়। তবে বর্তমান আণবিক যুগে এরূপ ভৌগোলিক অবস্থানও যে নিরাপদ সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
(ii) আয়তন : ভৌগোলিক সীমারেখাগত দিক থেকে কোনো একটি রাষ্ট্রের আয়তন সেই দেশের জাতীয় শক্তি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তবে আয়তনগত দিক থেকে বৃহৎ হলেই হল না, দেশটি পরিচালনার জন্য সুদক্ষ নেতৃত্বও প্রয়োজন। যেমন, চিনের বৃহৎ আয়তন চিনকে একটি বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে।
(iii) জলবায়ু : জলবায়ু একদিকে দেশের অর্থনীতিকে যেমন নিয়ন্ত্রণ করে তেমন মানুষের কর্মক্ষমতাও নির্ধারণ করে। যেমন, মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত দেশগুলি কৃষিকাজের উন্নতির মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটিয়েছে। আবার নাতিশীতোর অঞ্চলের জলবায়ুকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির আদর্শ জলবায়ু বলা হয়।
(iv) ভূপ্রকৃতিঃ ভূপ্রকৃতি বলতে কোনো দেশের অন্তর্গত পাহাড়, পর্বত, নদী, মালভূমি, সমভূমি ইত্যাদি সবকিছুকেই বোঝায়। আবার নদনদী যেমন অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে সুনিশ্চিত করে, তেমনই পাহাড়, পর্বত, মালভূমি ইত্যাদি ভূমিরূপের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
(b) জনসংখ্যা : কোনো দেশের জনসংখ্যা বা মানবসম্পদ হল জাতীয় শক্তির অন্যতম
একটি উপাদান। প্রতিরক্ষা, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ব্যাপকতা প্রয়োজন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় দেশের অধিক জনসংখ্যা দারিদ্র্য, অপুষ্টি, বেকারত্ব,সৃষ্টি করে। ফলে তা জাতীয় শক্তির অবনমন সূচিত করে।
(c) প্রাকৃতিক সম্পদ : প্রাকৃতিক সম্পদ দেশের স্থায়ী ক্ষমতার উদাহরণ। প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে বোঝায় কৃষিজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ, বনজ সম্পদ, জলজ ও প্রাণীজ সম্পদ ইত্যাদি। যে দেশ যত বেশি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ সেই দেশ তত বেশি স্বনির্ভর। যেমন, বলা যায় মধ্যপ্রাচ্যের খনিজতেল উৎপাদনকারী দেশগুলির আয়ের বেশিরভাগ অংশটাই আসে খনিজ তেল থেকে।
(d) সামরিক ব্যবস্থাপনা : কোনো দেশের সামরিক শক্তি জাতীয় শক্তির অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সামরিক ব্যবস্থা শক্তিশালী না থাকলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে হয়। আধুনিক অস্ত্র সমৃদ্ধ শক্তিশালী স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রাধান্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে উন্নতমানের প্রযুক্তিবিদ্যা, সুযোগ্য নেতৃত্ব, সেনাবাহিনীর গুণগতমান প্রত্যাশিত হওয়া দরকার।
(e) রাজনৈতিক উপাদান : দেশের শক্তি অনেকাংশে নির্ভর করে সরকারের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার উপর। দক্ষ, বিচক্ষণ ও সুযোগ্য নেতৃত্বই দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। তবে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমলা বা উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মচারীদের সততা, দক্ষতা ও জনকল্যাণকর কর্মসূচির মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে।
(n) নীতি মরগেনথাউ কূটনীতিকে জাতীয় শক্তির মস্তিষ্করূপে বর্ণনা করেছেন। কূটনীতিকে সমস্যা সমাধানের শেষ অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কূটনীতির মধ্য দিয়েই জাতীয় শক্তির অন্যান্য উপাদানগুলোক সার্থকভাবে প্রয়োগ করা যায়। বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য কূটনীতিবিদদের ভূমিকা অপরিসীম। পামার ও পারকিনস কুটনীতিবিদদের নিজ নিজ দেশের 'চক্ষু ও কর্ণ' বলে চিহ্নিত করেছেন।
👉 পরিশেষে বলা যায়, কোনো একটি দেশের জাতীয় শক্তির সব উপাদানগুলি সমান মাত্রায় বিরাজ করে না। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতার উপাদানগুলি সতত পরিবর্তনশীল। জাতীয় ক্ষমতা নির্ভর করে সরকারের ক্ষমতার উপাদনগুলিকে কতটা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারছে তার উপর।
2. জাতীয় স্বার্থ বলতে কী বোঝায়? জাতীয় স্বার্থ রক্ষার বিভিন্ন উপায় বা উপাদনগুলি আলোচনা করো। [H.S. 16, 18, 20] 2+6
Ans : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশারদগণ ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয় স্বার্থের ধারণা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম একটি মৌলিক ধারণা হল জাতীয় স্বার্থ। জাতীয় স্বার্থ বলতে যাবতীয় মূল্যবোধের সমষ্টিকে বোঝায়। এক কথায় জাতীয় স্বার্থ বলতে জাতীয় নিরাপত্তা, জাতীয় উন্নয়ন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ইত্যাদি নূন্যতম রাষ্ট্রীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বোঝায়, যেগুলি পূরণের জন্য প্রতেকটি রাষ্ট্র সক্রিয় উদ্যোগ নেয়। অধ্যাপক হার্টম্যানের মতে জাতীয় স্বার্থ হল বিভিন্ন ধরনের আকাঙ্ক্ষা যা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র অর্জন করতে চায়। বাস্তববাদী তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তা মরগেনথাউ-এর মতে যে-কোনো রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির মূল ভিত্তি হল জাতীয় স্বার্থের সংরক্ষণ।
• জাতীয় স্বার্থ রক্ষার বিভিন্ন উপায়সমূহ : প্রত্যেকটি দেশের জাতীয় ব্যবস্থাপনা নির্দিষ্ট কর্মসূচি, মতাদর্শ ও মূল্যবোধের দ্বারা পরিচালিত হয়। এই মূল্যবোধ ও জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতি বা উপায়গুলি নিম্নরূপ—
(a) কূটনীতি : জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি বা উপায় হল কূটনীতি। কূটনৈতিক পর্যায়ের উদ্যোগ ও আয়োজন বহু কঠিন সমস্যার সমাধানরূপে কাজ করে। সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কূটনীতিবিদরা তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করে- (i) আস্থা অর্জন, (ii) আপস মীমাংসা ও (iii) বলপ্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন। কুটনীতির প্রয়োগের মধ্য দিয়েই কোনো দেশ তার জাতীয় শক্তির অন্যান্য উপাদানগুলিকে স্বার্থকভাবে বাস্তবায়িত করে থাকে। এই কারণেই কূটনীতিবিদদের পামার ও পারকিন্স সরকারের 'চক্ষু ও কর্ণ' বলে চিহ্নিত করেছেন ।
প্রচারকার্য সম্পাদন : প্রচারকার্য জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের আর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কোনো দেশ তার পররাষ্ট্র নীতির সমর্থনে সমগ্র বিশ্বদরবারে প্রচারকার্য চালাম যাতে অতর্জাতিক ক্ষেত্রে ওই প্রচারের সমর্থনে ব্যাপক সাড়া পড়ে। এই প্রচারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে থাকে, যেমন ঠান্ডা লড়াইয়ের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্ব দরবারে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করে বিশ্ব জনমত গঠনের জন্য রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের ব্যাপক প্রয়োগ ঘটিয়েছিল।
(c) গেটবন্ধতা : জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশগুলির মধ্যে জোট গঠনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। মূলত জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ, শক্তিবৃদ্ধি, প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিজোটের মোকাবিলা এই উদ্দেশ্যেই জোট গঠনের প্রবণতা দেখা যায়। যেমন, সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক এবং মার্কিন পুঁজিবাদী এই দুই পরস্পর বিরোধী মতাদর্শকে কেন্দ্র করে ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভব ঘটলেও পরবর্তী সময়ে মার্কিন নেতৃত্বে NATO জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বে WARSAW জোটের উদ্ভব ঘটে। আবার উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ প্রশমনকারী নিরপেক্ষ জোট হিসেবে NAM-এর উপস্থিতিও চোখে দেখার মতো।
(d) অর্থনৈতিক সাহায্য ও ঋণ প্রদান : আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও প্রভাব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় উন্নত দেশগুলি, দরিদ্র ও বিকাশশীল দেশগুলোর কাছে অর্থনৈতিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এই রূপ সহযোগিতা বা ঋণ প্রদানের অন্যতম উদ্দেশ্য হল ঋণ গ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলির অকুণ্ঠ সমর্থন আদায় করা। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকারাগুয়া, অ্যাঙ্গোলা, আফগানিস্তান প্রভৃতি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করা যায়।
(e) বল প্রয়োগ : জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে উন্নত ও শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি অনেক সময় অপর রাষ্ট্রগুলির ওপর বলপ্রয়োগ বা বলপ্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন করে থাকে। সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হিসেবে ইরাকের উপর মার্কিন আগ্রাসনের কথা বলা যায়। প্রাক্তন ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসেনের ফাঁসি অন্যতম একটি দৃষ্টান্ত।
■ পরিশেষে বলা যায়, জাতীয় স্বার্থকে অবহেলিত করে কোনো দেশই তার পররাষ্ট্র বা বিদেশনীতি প্রয়োগ করতে পারে না। প্রতিটি দেশের ক্ষমতা বা শক্তির উপাদানগুলি ভিন্ন আর এই ভিন্নতার উপর নির্ভর করে জাতীয় স্বার্থের চাহিদা নির্ধারিত হয়। তবে বিদেশনীতির মৌলিক উপাদন হিসেবে জাতীয় স্বার্থের বিকল্প নেই।
3. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সংজ্ঞা দাও। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো। [H.S. 15, 19] 2+6
Ans : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করা সম্ভব নয়। কারণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞগণ ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ধারণা প্রদান করেছেন। পামার ও পারকিন্স-এর মতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আলোচনা করে বিশ্বের সব মানুষ ও গোষ্ঠীর যাবতীয় সম্পর্ক, মনুষ্য সমাজ ও তাদের কার্যকলাপ, আন্তর্জাতিক চাপ ও প্রক্রিয়া নিয়ে। আবার হার্টম্যানের মতে, অন্তর্জাতিক সম্পর্ক হল এমন একটি বিষয় যা বিভিন্ন রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের মধ্যে সামজস্য বিধানের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।
তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সীমানা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তুলনায় সংকীর্ণ। অনেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে সমার্থক বলে মনে করেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাষ্ট্রগুলির সম্পর্কের একমাত্র আলোচ্য বিষয় হল রাজনীতি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মৌলিক পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ-
(a) সীমানাগত পার্থক্য : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়বস্তুর গন্ডি ব্যাপক ও বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনা কেবল রাজনৈতিক সীমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, অরাজনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রবেশ করেছে। বিশ্বের সকল মানুষ ও গোষ্ঠীর নানা দিক্ নিয়ে আলোচনা করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। কেবল রাজনৈতিক নয় অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানবিক ইত্যাদি সকল দিক নিয়ে আলোচনা করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।
অন্যদিকে আন্তজাতিক রাজনীতি বলতে বোঝায় আন্তর্জাতিক সমাজের রাজনীতি। মান্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রের কূটনৈতিক আলোচনা ও রাজনৈতিক সাংগঠনিক ্যালোচনা-এর অন্তর্ভুক্ত। মরগেনথাউ-এর মতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি হল মূলত ক্ষমতার লড়াই। এক কথায় আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচনা সুনির্দিষ্ট এবং তা আন্তর্জাতিক সম্পর্কেরই অংশ বিশেষ।
(b) বিষয়বস্তুগত পার্থক্য : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় বাস্তববাদী তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তা মরগেন থাউ-এর মতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন, রাষ্ট্রগুলির কেবল পারস্পরিক ক্ষমতা বিরোধ সংক্রান্ত বিষয়ই নয় আন্তর্জাতিক স্তরে পারস্পরিক সহযোগিতা বন্ধুত্ব ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমগ্র বিশ্বব্যবস্থাকে স্থায়ী করার উপায় নিয়েও আলোচনা হয়।
কিন্তু, অপরদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মূল আলোচ্য বিষয় হল ক্ষমতাকেন্দ্রিক বিরোধ। অর্থাৎ, এক কথায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে বিরোধ, দ্বন্দ্ব ও সংঘাতই হল আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রধান বিষয় ।
(c) প্রকৃতিগত পার্থক্য : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বর্তমানে একটি নবীনতম শাস্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনা নতুন অধ্যায়নের বিষয়। প্রকৃতিগত দিক থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক, সরকারিবেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলিকে নিয়েও অধ্যায়ন করে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি প্রকৃতিগত দিক থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্রের ক্ষমতা, দ্বন্দ্ব, প্রতিযোগিতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিবর্তন, বিবর্তন নিয়ে পর্যালোচনা করে থাকে।
(d) দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সঙ্গে কেবল রাজনীতিগত বিষয় নয়, আইন, বিচার কাঠামা, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সংগঠন, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও পরিকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। তবে, অন্যদিকে বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কার্যকলাপের মধ্যেই আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচনা সীমাবদ্ধ।
ভালো নাম্বার পেতে আরো পড়তে পারেন:H.S. IMPORTANT REPORT WRITING