মাধ্যমিক(Madhyamik) ভৌত বিজ্ঞান তড়িৎ প্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া(Torit Probaho o rasayanik bikriya)সাজেশন( Suggestion)– WBBSE, Class 10th MADHYAMIK Physical Science Electricity and Chemical Reaction Suggestion . এই তড়িৎ প্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া বা Electricity and Chemical Reaction | torit bisleson – প্রশ্ন উত্তর গুলি 2023 সালে পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ (Important)। যে সকল ছাত্র-ছাত্রী মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর ভৌত বিজ্ঞান বিষয়ে খুব দুর্বল বা যারা ৯০ এর ওপর নাম্বার পেতে ইচ্ছুক, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন উত্তর ভালো করে পড়তে পারেন। এই মাধ্যমিক ২০২৪ পরীক্ষা তে প্রশ্নগুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।
মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান তড়িৎ প্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রশ্ন-উত্তর সাজেশন ২০২৩ Madhyamik physical science electricity and chemical reaction suggestion 2023
তড়িৎ বিশ্লেষণ [Electrolysis]
যে প্রক্রিয়ায় গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে তড়িৎ গমনের ফলে পদার্থটির রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে নতুন ধর্ম বিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়াকে তড়িৎ বিশ্লেষণ বা Electrolysis বলে।
তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ
যেসব পদার্থ দ্রব্যীভূত বা গলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করতে পারে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে ভিন্ন রাসায়নিক ধর্মবিশিষ্ট অন্য পদার্থ উৎপন্ন করে তাকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে।
উদাহরণ: অ্যাসিড : হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl), নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3), সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4), অ্যাসিটিক অ্যাসিড( CH3COOH)ইত্যাদি,
ক্ষার : সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড(NaOH), পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড( KOH), ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড Ca(OH)2, অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NH4OH)ইত্যাদি,
লবণ: সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl), ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড( MgCl2), সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4)ইত্যাদি
তড়িৎ বিশ্লেষণ {Electrolysis} কেন করা হয় বা ব্যবহার কী?
১.ধাতু নিষ্কাষন: তড়িৎ বিশ্লেষণ মূলত ধাতু (অ্যালুমিনিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম, লিথিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি )নিষ্কাশনে ব্যবহার হয়।
২. রাসায়নিক যৌগ উৎপাদন : বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয়। যেমন, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH), সোডিয়াম ক্লোরেট(NaClO3), পটাশিয়াম (KClO3)ক্লোরেট।
৩.Cl2 এবং হাইড্রোজেন H2 গ্যাস উৎপাদনে তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
৪.তড়িৎলেপন: এক ধাতুর ওপর অন্য কম সক্রিয় ধাতুর প্রলেপ দিতে তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
আয়ন
জলে বা অন্যান্য তরলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের অনুগুলির কিছু সংখ্যায় ভেঙে গিয়ে পজিটিভ এবং নেগেটিভ তড়িৎ গ্রস্ত বা চার্জ কণায় পরিণত হয়। এই চার্জ কনাগুলিকে আয়ন বলে।
আয়ন 2 প্রকার হয়:
i) ক্যাটায়ন: পজিটিভ বা ধনাত্মক(+) চার্জ কনা গুলিকে ক্যাটায়ন বলে।
ii) অ্যানায়ন: নেগেটিভ বা ঋণাত্মক (–) চার্জ কণাগুলোকে অ্যানায়ন বলে।
ভোল্টা মিটার কাকে বলে?
কোন তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে দিয়ে কারেন্ট চালোনা করতে হলে পদার্থটিকে জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় একটি পাত্রের মধ্যে নেওয়া হয়। অর্থাৎ যে পাত্রটি তে তড়িৎ বিশ্লেষণ পদার্থের,তড়িৎ বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে তাকে ভোল্টা মিটার বলে।
তড়িৎদ্বার বা ইলেকট্রোড কাকে বলে ?
ভোল্টমিটারের রাখা তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণের মধ্যে দুটি সুপরিবাহী ধাতু দন্ড ( সিলভার, প্লাটিনাম, কপার ইত্যাদি ) আংশিক ডুবিয়ে রাখা হয়। এই দন্ড দুটিকে তড়িৎদ্বার বলে।
অ্যানোড
যে তড়িৎদ্বারটি ব্যাটারীর ধনাত্মক বা পজেটিভ (+) মেরুর সাথে যুক্ত থাকে ওই তড়িৎদ্বারটিকে অ্যানোড বলে।
ক্যাথোড
যে তড়িৎদ্বারের বা ইলেকট্রোডের সঙ্গে ব্যাটারীর ঋণাত্মক বা নেগেটিভ (–) মেরুকে যোগ করা হয়, তাকে ক্যাথোড বলে।
অ্যানোডে এবং ক্যাথোড কী ঘটে থাকে?
তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় অ্যানোডে অ্যানায়ন গুলি এসে তাদের ইলেকট্রন (e‐) বর্জন করে থাকে আর
ক্যাটায়ন গুলি ক্যাথোডে এসে ইলেকট্রন (e‐) গ্রহণ করে থাকে।
সাধারণ জল তড়িৎ বিশ্লেষণ না করতে পারলেও ,অ্যাসিড যুক্ত জলের তড়িৎ-বিশ্লেষণ (Electrolysis of Acidified Water) করতে পারে— ব্যাখা কর ।
Ans:বিশুদ্ধ জল তড়িৎ এর কুপরিবাহী, কিন্তু সামান্য অ্যাসিড জলে মেশালে ওই জল তড়িৎ এর সুপরিবাহী হয় । এর কারণ হল বিশুদ্ধ জলে খুব কম সংখ্যক অণু H+ এবং OH‐ আয়েন বিশ্লিষ্ট থাকে । ওই জলে সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার যোগ করলে এদের আয়ন বিশ্লেষণের ফলে ওই জলের বিয়োজন(dissociate) হার অনেক গুন বেড়ে যায়, তার ফলে জলের তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা বাড়ে এবং তখনই তড়িৎ পরিবহন করতে পারে ।
সামান্য অ্যাসিড যুক্ত জলের (Electrolysis of Acidified Water) তড়িৎ বিশ্লেষণ এলেক্ট্রোলাইসিস ব্যাখ্যা কর
ব্যাখ্যা :-
ক্যাথোড বিক্রিয়া
সামান্য অ্যাসিডযুক্ত জলের(Acidified water) অণুগুলির বেশির ভাগ H+ এবং OH- আয়নে বিশ্লিষ্ট হয় । এই অবস্থায় প্ল্যাটিনাম তড়িদ্দ্বারের বা ইলেকট্রোড এর সাহায্যে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করার ফলে H+ আয়নগুলি ক্যাথোডে গমন করে এবং সেখানে ইলেকট্রন(e-) গ্রহণ করে তড়িৎ নিরপেক্ষ হাইড্রোজেন পরমাণুতে পরিণত হয় । দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু আবার পরস্পর যুক্ত হয়ে H2 গ্যাসে পরিণত হয় ।
অ্যানোড বিক্রিয়া
OH- আয়নগুলি অ্যানোডে যায় এবং ওদের অতিরিক্ত ইলেকট্রন বর্জন করে তড়িৎ নিরপেক্ষ OH মূলকে পরিণত হয় । OH মূলকগুলি পরস্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জল এবং অক্সিজেন উৎপন্ন করে । H2O⇌H++OH−
ক্যাথোডে: H+ + e = H, H + H = H2↑
অ্যানোডে: OH- - e = OH, 4OH = 2H2O + O2↑
এই পরীক্ষায় প্রমাণিত হল, জলের তড়িৎ বিশ্লেষণ করলে একই চাপ ও উষ্ণতায় ক্যাথোডে 2 আয়তন হাইড্রোজেন এবং অ্যানোডে 1 আয়তন অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় ।
H2SO4⇌2H++SO=4; H2O⇌H++OH−
তড়িৎলেপন কাকে বলে? এর উদ্দেশ্য কী উল্লেখ করাে।
Ans: তড়িৎলেপন : অপেক্ষাকৃত বেশি সক্রিয় ধাতু (তামা,লােহা, ইত্যাদি) বা ধাতু সংকরের (পিতল) তৈরি বস্তুর ওপর অপেক্ষাকৃত কম সক্রিয় ধাতুর (প্ল্যাটিনাম,নিকেল, সােনা ইত্যাদি) তড়িৎবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে , প্রলেপ দেওয়ার পদ্ধতিকে তড়িৎলেপন বলে।
তড়িৎলেপন-এর উদ্দেশ্য:
1)ধাতুর তৈরি বস্তুকে বাইরের ক্রিয়া (জল, বায়ু) ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে তড়িৎলেপন করা হয়। যেমন – লােহার বস্তুকে মরিচার( জাং) হাত থেকে রক্ষা করার জন্য লােহার বস্তুর ওপর জিংক,নিকেল ইত্যাদি ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয় ।
2) ধাতব পদার্থের স্থায়িত্ব ও সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য তড়িৎলেপন করা হয়। যেমন – পিতলের গয়নার ওপর সােনার প্রলেপ দিয়ে তার সৌন্দর্য আর স্থায়িত্ব বাড়ানো হয়।
গ্যালভানাইজেশন বা দস্তা-লেপন বা জিংক লেপন কি? গ্যালভানাইজেশন প্রয়োজনীয়তা কি ?
Ans:- গ্যালভানাইজেশন : লোহার বা আয়রনের তৈরি জিনিসকে মরিচা(জাং) পড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এসব বস্তুর ওপর জিংক ধাতুর পাতলা প্রলেপ দেওয়া হয়।যে পদ্ধতিকে জিংকের প্রলেপ হয় তাকে দস্তা-লেপন বা জিংক লেপন বা গ্যালভানাইজেশন বলে।
গ্যালভানাইজেশন প্রয়োজনীতা : আয়রনের আগেই জিংক জারিত হয়। ফলে জিংকের উপস্থিতি থাকলে আয়রন বা লোহার জারন হয় না। লোহার ধাতুটি সুরক্ষিত থাকে।
অ্যানােড মাড(Anode mud ) বলতে কী বোঝো? এর গুরুত্ব আলোচনা করো।
Ans: অ্যানােড মাড (Anode mud) : অশুদ্ধ কপার থেকে তড়িৎ-বিশােধন প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধ কপার ধাতু নিষ্কাশনের সময় মসলিনের থলিতে রাখা অ্যানােডে অবিশুদ্ধ তামার সাথে অবিশুদ্ধি আকারে সামান্য পরিমাণ গােল্ড, প্ল্যাটিনাম,সিলভার প্রভৃতি মূল্যবান ধাতু থাকে। এই ধাতুগুলি অন্যান্য অশুদ্ধির সঙ্গে কাদার আকারে মসলিন থলিতে জমা হয়। একে অ্যানােড মাড(বা অ্যানােড কাদা) বলে ।
গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা: অ্যানােড মাড বা কাদা হইতে সিলভার ,গােল্ড, প্ল্যাটিনাম প্রভৃতি মূল্যবান ধাতু পাওয়া যায় ।
নীচের কোনগুলি তড়িদবিশ্লেষ্য?
(i) লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড,কেরােসিন , পেট্রোল,সাধারণ লবণের জলীয় দ্রবণ ,পারদ,গ্লুকোজের জলীয় দ্রবণ, তুঁতে
গলিত কস্টিক পটাশ,চিনির জলীয় দ্রবণ, ক্যালশিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণ,
গ্রাফাইট,বিশুদ্ধ জল ,NaOH
Ans:
তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ:লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড,সাধারণ লবণের জলীয় দ্রবণ ,গলিত পটাশিয়াম ক্লোরাইড, NaOH,ক্যালশিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণ,তুঁতে
তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ : কেরােসিন, পেট্রোল,চিনির জলীয় দ্রবণ,গ্লুকোজের জলীয় দ্রবণ,বিশুদ্ধ জল
তড়িৎ পরিবাহী : গ্রাফাইট , পারদ(Hg)।
চিনির জলীয় দ্রবন তড়িৎ পরিবহণে ব্যর্থ , কিন্তু সোডিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবন বা লবণ তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম— ব্যাখা করো। [MP-2017, 22]
উঃ- চিনি একটি সমযোজী জৈব যৌগ বলে জলীয় দ্রবনে কোনো আয়নে বিশ্লিষ্ট হতে পারে না। তাই চিনির জলীয় দ্রবন তড়িৎ পরিবহণে অক্ষম । অপরদিকে , সোডিয়াম ক্লোরাইড(NaCl) বা লবণ একটি তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ এবং জলীয় দ্রবনে বিশ্লিষ্ট হয়ে Na+ এবং Cl– আয়ন তৈরী করে। তাই সোডিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবন তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম।
কঠিন সােডিয়াম ক্লোরাইড(NaCl) তড়িৎ পরিবহণে অক্ষম কিন্তু গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম -ব্যাখ্যা করাে।
Ans: সােডিয়াম ক্লোরাইড কঠিন অবস্থায় কেলাস আকারে থাকে । কেলাসের মধ্যে Na+ ও Cl- আয়নগুলির পরস্পরের মধ্যে স্থিরতড়িৎ আকর্ষন বলের প্রভাবে কেলাসের মধ্যে দৃঢ়ভাবে(compact) আবদ্ধ থাকে। তড়িৎ পরিবহনের জন্য আয়নগুলিকে গতিশীল হওয়ার প্রয়োজন । কিন্তু যেহেতু আয়নগুলি স্থির হয়ে থাকে , তাই কঠিন সােডিয়াম ক্লোরাইড( NaCl) তড়িৎ পরিবহনে অক্ষম।গলিত অবস্থায় বা জলীয় দ্রবণে NaCl বিশ্লিষ্ট হয়ে Na+ ও Cl- আয়ন উৎপন্ন করে। এই আয়নগুলিই তড়িৎ পরিবহনে সক্ষম ।
তড়িবিশ্লেষণ ঘটানাের জন্য সমপ্রবাহ বা DC প্রয়োজন হয়,পরিবর্তীতড়িৎপ্রবাহ বা AC ব্যবহার করা যাবে না –ব্যাখা করো।
Ans:পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ AC পাঠানো হলে তড়িদ্দারের সঙ্গে যুক্ত মেরুদ্বয়ের চার্জ প্রতিমুহূর্তে বদলে(change) যায় ।ফলে এই মুহূর্তে যা ক্যাথােড, পরমুহূর্তে তা অ্যানােডে রূপান্তরিত হবে এবং অ্যানােডও ওই মুহূর্তে ক্যাথােডে পরিবর্তিত হবে। ফলে অ্যানায়ন বা ক্যাটায়ন কোনাে নির্দিষ্ট অভিমুখে যাবে তা ঠিক করতে পারবে না এবং ক্যাথােড ও অ্যানােডের বিক্রিয়া হবে না।এজন্য তড়িদবিশ্লেষণ ঘটানাের জন্য সমপ্রবাহ( DC )ব্যবহার করা হয় এবং পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ ( AC)ব্যবহার করা যাবে না।